আওয়ামীলীগের অনুশোচনা নেই, এটা কি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত?

আওয়ামী লীগের অনুশোচনা নাই, এ ধরনের কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য কী আওয়ামী লীগ দিয়েছে? একটা আন্দোলন ও তার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির যোগসাজশে সুগভীর ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানো হয়েছে। তাই এই ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতর-বাহির বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভুল-ভ্রান্তি থাকলে (আমি মনে করি, আছে) দুঃখ প্রকাশ করতে হবে বা করা উচিত। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী দেশের জড়িত হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার পতনে যে পরিকল্পিতভাবে লাশ ফেলানো হয় তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির অ-আ-ক-খ পাঠ করা মানুষ মাত্রই বোঝে। উদাহরণস্বরূপ- ২০০২ সালে ভেনিজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজকে হটানোর জন্য সিআইএ -এর প্রত্যক্ষ মদদে ১১টা লাশ ফেলানো হয়েছিল এবং নতুন সরকারও প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু তা রাখতে পারেনি। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৪ সালে ইউক্রেনে আন্দোলনের গতিবেগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্নাইপাররা গুলি করে লাশ ফেলেছিল। যা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তুলেছিল। গত জুলাইয়ের আন্দোলনে বাংলাদেশেও এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য পরিকল্পিতভাবে লাশ ফেলা হয়েছে। এতে আন্দোলনের গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাধারণ মানুষের আবেগকে নাড়া দেওয়া হয়েছে। একটি সরকার ফেলানোর জন্য যারা লাশের রাজনীতি করল তারা কি ক্ষমা চাইবে? তারা কি অনুতপ্ত হবে? এই প্রশ্ন উঠা শুরু করেছে।

আবার, বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের অনুশোচনার কথা উঠছে। এই আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল ছিল। ভ্রান্ত কিছু নীতি সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল। এটা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা থেকে শুরু করে কর্মী পর্যন্ত অনেকেই স্বীকার করে। আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে হলে ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সেটার জন্য তো পার্টি সমগ্র ঘটনাকে নিজেদের দৃষ্টিতে পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করবে এবং তার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। একটি রাজনৈতিক দল তো আর ব্যক্তির মতো খুব সহজেই মুভ করতে পারে না। ফলে, সিদ্ধান্তটাও চট করে নিতে পারে না। আর বাইরে থেকে।কেউ প্রেসক্রাইভ করলে তো সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়। সেখানে বাইরে থেকে চাপ শুরু হওয়ার পাশাপাশি দলের ভেতরে কিছু লোক প্রকাশ্যে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসমালোচনার বয়ান দিয়ে কী বুঝাতে চাইছে? নাকি তাদের গায়ে যে গন্ধ এর মধ্য দিয়ে সেটা দূর করার চেষ্টা করছে। একইসাথে পার্টির ভেতরে ও বাইরে উভয় জায়গায়। কারণ যারা এই ধোঁয়া তুলছে তারা ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তাদের অতীতের খতিয়ান খুব ভালো না। নেতা হওয়ার আগে-পরে তাদের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থানের আকাশ-পাতাল ব্যবধান ঘটেছে। প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে, দলের কর্মীদের পরিশ্রমের সঙ্গে বেইমানি করে এবং সংগঠনের পদ বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের।মালিক হওয়ায় কী তাদের অনুশোচনা জাগ্রত হয়েছে বলে মনে হয় না। তাহলে দলের এই দুঃসময়ে সেটা কর্মীদের মাঝে বিলিয়ে দিত। এটা তাদের পূর্বাপরের ন্যায় ভণ্ডামি আচরণ। একজন নিজেকে এতো দলপ্রেমী ও দেশপ্রেমী দাবি করে অথচ বিদেশে ৬টা কোম্পানি খুলেছে। একবার বলেছিল, বিদেশে কোম্পানি খুলতে তেমন টাকা লাগে না। টাকা লাগে কি লাগে না-সেটা তো প্রশ্ন না? প্রশ্ন হলো, আরে ভাই, আপনি যদি দেশপ্রেমিক হবেন তাহলে কোম্পানিগুলো বিদেশে খুললেন কেনো? আপনার কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে আপনার সংগঠন প্রেম ও দেশপ্রেম পোষাকি। আর একজন তো সংগঠনই বুঝল না। দায়িত্ব পাওয়ার পর মেয়াদ শেষ করতে পারল না। দেড় বছরে ২টা সাংগঠনিক শাখার সম্মেলন করতে পেরেছিল। সারাক্ষণ ব্যস্ত ছিল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর তদবিরবাজিতে। আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি কীভাবে সাজিয়েছিল তা আর না উল্লেখ করলাম। সে এখন ছবক দেয় আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের কী করা উচিত। প্রকৃতপক্ষে, এরা এদের ভণ্ডামি দিয়ে সংগঠন হাইজ্যাকের চিন্তা করছে এবং দলের নেতাকর্মী ও বাইরের মানুষের কাছে ধবধবে ফেরেস্তা সাজার চেষ্টা করছে। নীতি-আদর্শহীন বিভিন্ন বাজি যুক্ত কাজের সঙ্গে যারা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত তারা সংগঠনে আবার নেতৃত্বে আসলে শুধু মুখোশই পরিবর্তন হবে, সংগঠনের কোনো উপকার হবে না। তাদের ধবধবে ফেরেস্তায় রূপান্তরিত হওয়ার এই অপকৌশল রুখতে না পারলে দলের নেতাকর্মীরা আবার বাক্সবন্দী হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীদের অপেক্ষা করতে হবে।

মতামতঃ আজিজুল সর্দার

সম্পর্কিত নিউজ

আরও পড়ুন