গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ আর কখনোই বাংলাদেশে রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। মাননীয় উপদেষ্টার এই কথার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে রাজনৈতিক দখলদারিত্বের ইঙ্গিত আছে। আর সেটা বাংলাদেশে নিও ফ্যাসিবাদী ধারণার বহির্প্রকাশ। কারণ আপনি যদি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাস করে তাহলে আপনি বলতে পারেন না কে রাজনীতিতে ফিরতে পারবে বা পারবে না। কিন্তু আপনি যখন সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে নির্মূল করতে চায় তখন বোঝা যায়, আপনি রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গায়ের জোরে এই কথা বলছেন। কে কাকে রাজনীতি করতে দেবে। আর কে কাকে করতে দেবে না এটা নির্ধারণ করাটা সহজ না। তবে তার আগে বুঝতে হবে রাজনীতি কী এবং রাজনীতির উপাদানগুলো কী কী?
প্রথমে, সংক্ষেপে রাজনীতি হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মচিৎকার। রাজনীতি কেউ কাউকে করতে দেয় না বা দিতে চায় না। রাজনীতি করার অধিকার আদায় করে নিতে হয়। এই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের জন্য যা যা লাগে তা-ই রাজনীতির উপাদান।
রাজনীতির অনেক উপাদান রয়েছে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলো হলো-
১) একটি মতাদর্শ
২) আদর্শিক নেতা
৩) মতাদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠান
৪) কর্মীবাহিনী
এছাড়াও আরো অনেক উপাদান থাকতে পারে। তন্মধ্য, এগুলো অন্যতম। এখন আপনি যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখতে পাবেন এই উপাদানগুলো আওয়ামী লীগের রয়েছে। তার মানে আপনি চাইলেই আওয়ামী লীগকে রাজনীতির বাইরে রাখতে পারবেন না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বা বয়ানের শক্তিমত্তা যেহেতু রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত সেহেতু দলের বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিসরের কম-বেশি হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ধারা নির্মূল করা সম্ভবপর না। এটা যে করতে যাবে তার শক্তি ব্যয় হবে। অনেক দলের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগও এই শক্তি ব্যয় করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্রোতধারার মধ্যে সেই দলের উপাদানগুলো সক্রিয় ছিল বলে তাদেরকে নির্মূল করা যায় নাই। সুতরাং মাননীয় উপদেষ্টা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরতে না দেওয়ার জন্য যে পথে হাঁটছেন সেখানে তার ব্যক্তিগত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। ব্যক্তিগত ক্রোধ থেকে কোনো পন্থার দিকে ঝোঁক থাকলে সামষ্টিক রাজনীতিতে সেটা কোনো ফল দেয় না। বরং তিনি জনগণকে সক্রিয় করে সিস্টেম পরিবর্তনের কথা বলতে পারতেন। সেই সিস্টেমকে দৃঢ় ভিত্তি দেওয়ার জন্য নিজেদের শ্রম দেওয়া ও আত্মত্যাগের প্রস্তুতির কথার জানান দিতে পারতেন। তার মধ্য দিয়ে পুরানো পন্থার রাজনৈতিক ধারা অকার্যকর করে ফেলা গেলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বদলাতে বাধ্য হতো এবং সেই সিস্টেমের মধ্যে যে রাজনীতি করতে পারবে সে টিকে থাকবে, যে অপাংক্তেয় হবে সে হারিয়ে যাবে। রাজনৈতিক ধারার মধ্যে রাজনৈতিক উপাদান সক্রিয় রেখে মুখোশের বদল হলেও স্পিরিটের বদল হচ্ছে না। সুতরাং সময়ের পরিবর্তনে একই স্পিরিটে নতুন মুখোশে তার আবির্ভাব ঘটবেই।
আপনারা রাষ্ট্রটাকে নিজের শরীর মনে করতেছেন। তবে নিজের শরীরেও মাঝে মাঝে জড়তা দেখা দেয়। যে কারণে কোনো কাজ করতে মন চাইলেও শরীরে সায় দেয় না। রাষ্ট্র বিভিন্ন অর্গানের সমষ্টি। এগুলোর মধ্যে বহুমাত্রিক জড়তা রয়েছে। আপনি চাইলেই নিজের মনের মতো করে আড়মোড়া ভেঙে সেটা চালাতে পারবেন না। অনেক সময় সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনি যত দমন পীড়নের কথা বলবেন ততই বিভিন্ন চেম্বারে আওয়ামী লীগ নিয়ে আলাপও বেশি হবে। তাই যতদিন যাবে আওয়ামী লীগের নিষ্পেষিত-নির্যাতিত নেতাকর্মীদের স্লোগান তেজ তত গগনবিদারী হবে। সময় যত গড়াচ্ছে সেটার সম্ভাবনা ততই প্রকট হচ্ছে।
মতামতঃ আজিজুল সর্দার