মিশরে আরব বসন্তের জোয়ারে দীর্ঘদিনের শাসক হোসনি মুবারকের পতনের পর ২০১2 সালে ক্ষমতায় আসে মুসলিম ব্রাদারহুড। এই দলটি সাইদ কুতুব এবং হাসান আল বান্নার আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং মওদুদিবাদ অনুসরণকারী একটি রাজনৈতিক সংগঠন। একসময় নিষিদ্ধ থাকলেও বিপ্লবের পর মুহাম্মদ মুরসি দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন।
ব্রাদারহুডের শাসন ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
মুরসির ক্ষমতাগ্রহণের পর দেশটি দ্রুত বিভাজিত হয়। প্রশাসনিক দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করলেও আইন প্রয়োগের ভার দেন কায়রোর গ্র্যান্ড মসজিদের ইমামের হাতে। ইমামের নির্দেশনায় মিশরে শরিয়া আইন কার্যকর হয়। হিজাবকে বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
মিশরে প্রায় ৩৫ শতাংশ জনগণ খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এমন এক পরিবেশে কায়রোর সবজি বাজারে এক খ্রিস্টান তরুণীর ওপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যা ভিডিও আকারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই বর্বর ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।
সেকুলার প্রতিবাদ ও তাহরির স্কয়ার
এই ঘটনার পর সেকুলার ও উদারপন্থী জনগণ তাহরির স্কয়ারে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু করে। প্রতিবাদের উত্তাল ঢেউ দমন করতে মুরসি সরকার গুলি চালায়, যেখানে কয়েক শত মানুষ নিহত হয়।
সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান ও মুরসির পতন
দেশের অস্থিরতার মধ্যে সেনাপ্রধান আহমেদ সিসি বিদ্রোহ করেন। তিনি মুরসি এবং তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের গ্রেপ্তার করে ক্ষমতা দখল করেন। বিচারের মাধ্যমে মুরসি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
শরিয়া আইন ও সমালোচনা
মুরসির শাসনামল শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই আইনকে দমনমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচনা করা হয়। শরিয়া আইনে নারীর অধিকার সংকুচিত হয়ে যায়। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, কাজ করা বা ভ্রমণ করার স্বাধীনতা সীমিত হয়।
শরিয়া আইনের আওতায় বহুবিবাহ, মুতা বিয়ে, অনার কিলিং এবং নারীদের ওপর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
মিশরের ঘটনা সারা বিশ্বে ইসলামী চরমপন্থা এবং শরিয়া আইনের বিরোধিতার প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সেকুলার ও উদারপন্থী জনগণ এই ধরনের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানানো হচ্ছে।
বিবেচনার জায়গা
ধর্মীয় আইনের অপব্যবহার এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একজন খ্রিস্টান তরুণীর ওপর বর্বরতার মতো ঘটনা কোনো ধর্ম, সমাজ বা আইনের মাধ্যমে সমর্থন করা যায় না। প্রতিবাদ জানানো উচিত এই ধরনের অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
আজকের পৃথিবীতে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং চরমপন্থা যে আকার ধারণ করছে, তা প্রতিহত করতে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য।