রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনের রাস্তায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ভিড় জমিয়েছে সাধারণ মানুষ। স্বল্পমূল্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চাল, আটা, আলু এবং পেঁয়াজের মতো পণ্য কিনতে সেখানে প্রায়শই মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। সম্প্রতি উম্মে হাবীবা নামে এক গৃহিণীকে সেখানে দেখা গেল। একসময় বাজারে গিয়ে পণ্য কিনলেও, এখন টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তিনি।
উম্মে হাবীবা বলেন, “আগে টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে সংকোচ লাগত। মাস্ক পরে থাকতাম যাতে কেউ চিনতে না পারে। তবে বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে এখন লুকোচুরির আর সময় নেই। সবাই টিসিবির পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে।” পণ্য কিনে মাসে প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকা সাশ্রয় হয় বলে জানান তিনি।
বাড়তি চাপে টিসিবি ডিলারদের হিমশিম
টিসিবির ডিলার মো. ফারুক জানান, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করেন তারা। একেকদিন একেক জায়গায় পণ্য বিক্রি করা হয় এবং প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের প্রচুর চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। একজন ডিলার দিনে প্রায় ৩৫০ জন ক্রেতার জন্য পণ্য বরাদ্দ পান। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দকৃত পণ্য কম হওয়ায় অনেকেই নিরাশ হয়ে ফিরে যান।
ফারুকের সহকারী রঞ্জু জানান, ট্রাক আসার আগেই মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু মানুষের লাইনে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তারা ক্রেতাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একজন ক্রেতা একাধিকবার পণ্য কিনছেন কিনা, সেদিকেও নজর রাখেন।
মধ্যবিত্তদের সংকট: কর্মী থেকে গৃহকর্মীরাও লাইনে
লাইনে দাঁড়ানো কাদির রহমান (ছদ্মনাম), নামকরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মাসে ২৭ হাজার টাকা বেতন পেয়ে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে জীবন চালানো তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “মালিবাগের বাজারে জিনিসপত্রের এত দাম, সেখানে যাওয়া আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে টিসিবির ট্রাক থেকেই বাজার করছি।”
গৃহকর্মী কুলসুম বেগমও টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, “দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়ানো লাগছে, কিন্তু তাড়াতাড়ি পণ্য কিনে বাড়ি গিয়ে রান্নার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।” তিনি তার ছোট সন্তানকে একা রেখে বাজারে এসেছেন বলে জানান।
স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা
টিসিবি ডিলার ফারুক জানালেন, তারা ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রতিদিন সুলভ মূল্যে বিক্রি করেন। পণ্যের মূল্য সাধারণ বাজার দামের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। প্রতি ক্রেতা ১০০ টাকায় দুই লিটার ভোজ্যতেল, ৬০ টাকায় দুই কেজি মসুর ডাল এবং ৩০ টাকায় পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারেন।
ফারুকের মতে, আগে নিম্নবিত্তরা মূলত টিসিবির পণ্য কিনতেন। তবে বর্তমানে উচ্চবিত্ত ছাড়া প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষই এই পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়ান। টিসিবির ট্রাক আসার আগেই মানুষ সেখানে ভিড় জমায় এবং পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অনেকে লাইনে থেকে যান।