বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, আজ (১৩ নভেম্বর, বুধবার) এক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গভবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি সংবিধান লঙ্ঘন করে বঙ্গভবন থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ও অসাংবিধানিক অন্তবর্তীকালীন সরকারের দোসররা এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।”
তারা আরও বলেন, “১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ও একটি মানচিত্র। সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিটি সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমান অবৈধ ও অসাংবিধানিক অন্তবর্তীকালীন সরকারের দোসররা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তির এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের প্রতিটি জায়গা থেকে পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা হচ্ছে।”
তারা একে একটি গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “সম্প্রতি বঙ্গভবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে দিয়ে পুনরায় তাদের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না। প্রতিটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ ও লালন করেন। অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এদেশে যারাই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছেন। সেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিকে জনগণ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছেন।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দাবি করে, “বাংলাদেশের অপর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বাদ দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস লেখা অসম্ভব। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, অবিলম্বে সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গভবনসহ দেশের সকল অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংরক্ষণ করতে হবে। সকল পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা ধ্বংস করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তারা শহীদ নূর হোসেন চত্বরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা বলেন, “অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য সারাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”
এছাড়া তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমরা বাঙালি জাতির ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বঙ্গবন্ধুর অবদান বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।”
এতে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতাকে অবমাননা করা দেশের জনগণের জন্য সহ্যযোগ্য হবে না।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এই প্রতিবাদে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করেছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে, এবং কোন ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।