জাতীয় শহীদ মিনারে শনিবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ শীর্ষক সমাবেশে অর্থনীতিবিদ ও সমাজ চিন্তক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বৈষম্য, বিপীড়ন ও আধিপত্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ চাই, বৈষম্যের বাংলাদেশ চাই না। বৈচিত্র্যের ঐক্যই আমাদের শক্তি, বৈষম্য নয়।”
অ্যাডভোকেট মাঞ্জুর আল মাতিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, রিকশা ও ইজিবাইক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।
বৈচিত্র্যের বার্তায় ঐক্যের শক্তি
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশ একটি বহুজাতি, বহুবর্ণ ও বহু বৈচিত্র্যের দেশ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠলেই সমাজ শক্তিশালী হয়। বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে না পারলে বৈষম্যের জন্ম হয়। আমাদের উচিত বৈচিত্র্যের পক্ষে দাঁড়ানো এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। ধর্ম ও সংস্কৃতির নামে যারা বৈষম্য সৃষ্টি করে, তাদের প্রতিহত করতে হবে।”
তিনি নারায়ণগঞ্জের লালনমেলায় বাধার প্রসঙ্গে বলেন, “ধর্মের নামে একটি শ্রেণি সবসময় আনন্দ-বিনোদনের বিরোধীতা করে। লালন, শাহ আবদুল করিমের গানে বৈচিত্র্যের ঐক্যের যে বার্তা রয়েছে, তা আঘাত করলে আমরা মেনে নেব না।”
শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ
অটোরিকশা শ্রমিকদের প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকারের উচিত অটোরিকশার ত্রুটি মুক্ত করা, কিন্তু তা না করে শ্রমিকদের দমন নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক; তাদের বাইরে রেখে কোনো অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা সবার অধিকার নিশ্চিত করবে।”
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও বৈচিত্র্যের উদযাপন
সমাবেশে বৈচিত্র্যের ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনথাং ম্রো ম্রো ভাষায় গান পরিবেশন করেন। আকরামুল হিজড়া নৃত্য পরিবেশন করেন। নাট্যদল বটতলা ‘আবার ফাল্গুন’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে।
এছাড়া অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী সুনিল কর্মকার, কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলি, নাদিম কাওয়াল এবং গানের দল সংযোয়ার। লালন, শাহ আবদুল করিমের গানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় বৈচিত্র্যের ঐক্য।
এই সমাবেশে অংশ নেওয়া বক্তারা বৈষম্যহীন, বৈচিত্র্যময় এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের আহ্বান জানান। তারা একযোগে বৈচিত্র্যের উদযাপনকে সমাজের শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।