বাংলাদেশ পুলিশের ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই-নিরস্ত্র) পদে নিয়োগের জন্য বর্তমানে দুইটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ফলে যোগ্য প্রার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েকটি ধাপে উত্তীর্ণ হতে হয়, যার জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি এবং দৃঢ় মনোবল। এবার আলোচনা করা হবে নিয়োগের ধাপগুলো, প্রস্তুতির উপায় এবং কিভাবে এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব।
১. প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং
প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রার্থীর এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলসহ উচ্চতার ভিত্তিতে নির্ধারিত ওয়েববেজড স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়। প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীরা শারীরিক মাপ, সহনশীলতা এবং কাগজপত্র যাচাইকরণের জন্য পরবর্তী ধাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পান।
২. শারীরিক মাপ ও সহনশীলতা পরীক্ষা
প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত সময় এবং স্থানে শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাইকরণ এবং শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এই ধাপে প্রার্থীদের সাতটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে হবে—দৌড়, লংজাম্প, হাইজাম্প, পুশআপ, সিটআপ, ড্র্যাগিং, এবং রোপ ক্লাইম্বিং। প্রতিটি ইভেন্টে প্রার্থীর দক্ষতা পরীক্ষা করা হয় এবং তিন দিনের মধ্যেই এই পরীক্ষার সব ইভেন্ট শেষ করা হয়।
৩. লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এই ধাপটি মোট ২৫০ নম্বরের হয় এবং এতে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়—ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন বিষয়ে ১০০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞান ও গণিতে ১০০ নম্বর এবং মনস্তত্ত্ব বিষয়ে ৫০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষায় সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই ধাপেই প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তা এবং মানসিক দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়।
৪. কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা
লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরবর্তী ধাপে কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই ধাপে মাইক্রোসফট অফিস, ওয়েব ব্রাউজিং এবং ট্রাবলস্যুটিং বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ পুলিশ বাহিনীর কাজের অনেক ক্ষেত্রেই কম্পিউটার দক্ষতা প্রয়োজন হয়।
৫. বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষা
কম্পিউটার দক্ষতায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ৫০ নম্বরের এই পরীক্ষায় প্রার্থীদের স্মার্টনেস, আত্মবিশ্বাস এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। এই ধাপে সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সঠিকভাবে নিজের মত প্রকাশের ক্ষমতা।
৬. স্বাস্থ্য পরীক্ষা
লিখিত, মনস্তত্ত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং কোনো প্রার্থী একবার অযোগ্য হলে তাকে আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি।
৭. মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয় মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা, রাজশাহীতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়, যা তাদের পেশাদার পুলিশ সদস্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার আগে প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশনও করা হয় এবং কোনো তথ্য গোপন বা ভুল প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
নিয়োগ পরীক্ষায় সফলতার কৌশল
ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মিত অনুশীলন। সফল প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় প্রতিদিন অনুশীলন করতে হয়।
১. দৌড়ের প্রস্তুতি
প্রতিদিন নিয়মিত দৌড়ানোর চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি। সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য হালকা ওজন নিয়ে দৌড়ানো এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত দম চর্চা করতে হবে। দৌড়ের সময় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দৌড়ের গতি বাড়ানো প্রয়োজন।
২. লংজাম্প এবং হাইজাম্প
লংজাম্প এবং হাইজাম্পে দক্ষতা অর্জনের জন্য স্কোয়াট ও জাম্পের চর্চা করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে পায়ের পেশি শক্তিশালী করে তুলতে হবে এবং লাফানোর ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৩. পুশআপ এবং সিটআপ
প্রতিদিন ১০-১৫টি পুশআপ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ানো উচিত। সিটআপের জন্য পেটের পেশি শক্তিশালী করতে প্রতিদিন ২০-২৫টি সিটআপ দেওয়া যায়। এটি শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
৪. ওজন বহনের সক্ষমতা
ড্র্যাগিং এবং ওজন টেনে আনার ইভেন্টের জন্য ওজন বহন করার চর্চা করতে হবে। এটি করতে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ওজন বহনের কৌশল শেখা জরুরি।
শেষ কথা
বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত কর্মকর্তা হওয়ার জন্য কঠোর অনুশীলন এবং সঠিক মনোভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়োগের সাতটি ধাপে প্রতিটি ইভেন্টে আলাদা করে পাস করতে হয়, তাই প্রতিটি ধাপের জন্য সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে আবেদন করার পর থেকেই প্রার্থীদের দৈনিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।