৫ নভেম্বর ২০২৪, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এই নির্বাচন সারা বিশ্বে বিশেষ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই নিবন্ধে মার্কিন নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতায় থাকা ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস জয়ী হলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে তেমন কোনও পরিবর্তন আসবে না। তবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, যা চীনকে আটকে রাখার একটি কৌশল হিসেবে গৃহীত। এই কৌশল মার্কিন দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়ে আসছে। তাই, যেই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশ সংক্রান্ত মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি খুব বেশি পরিবর্তিত হবে না।
কূটনীতিকদের দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের সাবেক এক কূটনীতিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চীনের প্রতি একটি নিরপেক্ষ অথবা সহনশীল নীতি গ্রহণকারী দেশ হিসেবে দেখে। তাই বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বড় কোনও পরিবর্তন হবে না বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশাল বাজার। পাশাপাশি, জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগও রয়েছে। সাবেক কূটনীতিকদের মতে, রিপাবলিকানরা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে বেশি উৎসাহী। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে বাংলাদেশ ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। এই খাতে রিপাবলিকানদের আগ্রহের কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়তে পারে।
মানবাধিকার নিয়ে অবস্থান
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মানবাধিকার। এই বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা কঠোর অবস্থান নেয়, যা বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য কখনও কখনও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মানবাধিকার প্রশ্নে রিপাবলিকানদের তুলনামূলক শিথিল মনোভাব রয়েছে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কিছুটা কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতের সাথে সম্পর্ক এবং বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক বহু বছর ধরে মজবুত অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিককালে ট্রাম্পের একটি টুইটে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে। এতে ভারতের প্রভাব বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পররাষ্ট্রনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতে পারে।