বিএনপির সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদসহ ৬২টি সুপারিশ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ৬২টি প্রস্তাব পেশ করেছে। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি এবং গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন অন্যতম।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজের কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দেয় বিএনপি। পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও প্রস্তাবনার মূল দিক

সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় সংশোধনী আনতে বিএনপি তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছে। সালাহ উদ্দিন আহমদ জানান, প্রস্তাবনায় দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ১৯৭১ সালের শহিদদের রক্তের অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুসংহত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে যেন সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে।”

মুখ্য প্রস্তাবগুলো

বিএনপির পেশ করা প্রস্তাবনায় রয়েছেঃ

  • নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃস্থাপন।
  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন।
  • গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন।
  • প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা।অধস্তন আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে রাখার ব্যবস্থা
  • উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদের প্রবর্তন।

গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে প্রস্তাব

সালাহ উদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “আমরা এমন একটি সংবিধান প্রস্তাব করেছি, যা গণতান্ত্রিক কাঠামো ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। প্রজাতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভ—নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগে ভারসাম্য আনার জন্য এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া

সংসদ না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন এসব প্রস্তাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশ করবে। এরপর সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞ ও সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিফলন করে ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা হবে।”

সংবিধান পুনর্লিখনের প্রশ্ন

সংবিধান পুনর্লিখন প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিন জানান, “আমরা ব্যাপক ভিত্তিতে সংশোধনের প্রস্তাব করেছি। এর উদ্দেশ্য হলো সংবিধানকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে উন্নীত করা এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।”

বিএনপির এ প্রস্তাবগুলো কীভাবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

 

সম্পর্কিত নিউজ

আরও পড়ুন