চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজের জীবিত স্বামী আল-আমিনকে মৃত দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে। মামলার বাদী কুলসুম বেগম এ অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে কুলসুম বেগম (২১) ও তার দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। পরে তাদের আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রকিবুল ইসলাম।
কুলসুমের বক্তব্য
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে কুলসুম জানান, চার বছরের সন্তানকে নিয়ে তিনি সিলেটে শ্বশুরবাড়িতে স্বামী আল-আমিনের সঙ্গে থাকতেন। গত ২৮ আগস্ট পারিবারিক কলহের কারণে সিলেট থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন। আসার পথে গাড়িতে শফিকুর রহমান নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি কুলসুমকে চাকরির প্রলোভন দেখান।
কুলসুমের অভিযোগ, শফিকুর তাকে রুহুল আমীনের কাছে নিয়ে যান। রুহুল আমীন ও শফিকুর তার চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইলে, তারা তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে একটি মামলা প্রস্তুত করেন। তাদের নির্দেশে কুলসুম আদালতে গিয়ে উকিলের সামনে কাগজপত্রে সই করেন।
বোনের বক্তব্য
কুলসুমের বোন ফাতেমা অভিযোগ করেন, রুহুল আমীন কুলসুমকে ভয় দেখিয়ে মামলা করতে বাধ্য করেন। তিনি বলেন, “রুহুলের কাছে সবসময় পিস্তল থাকত, যা দেখিয়ে তিনি আমার বোনকে ভয় দেখাতেন। এমনকি মামলা থেকে কিছু আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য টাকার লেনদেনও হয়েছে।”
অভিযুক্তদের বক্তব্য
শফিকুর রহমান বলেন, “গাড়িতে কুলসুমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরে তাকে রুহুল আমীনের কাছে নিয়ে যাই। রুহুল মামলার সব কাজ করেছেন।”
অন্যদিকে রুহুল আমীন দাবি করেন, “কুলসুমই তার কাছে মামলা করার সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিছু আসামির নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য এভিডেভিট করানো হয়েছে। তবে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।”
পুলিশের অবস্থান
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর জানান, কুলসুম ও তার সহযোগীরা মিথ্যা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কুলসুমকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হবে।
প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক লোক মারা যায়। তাদের মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে একজনকে দাফন করা হয়। কুলসুম সেই মরদেহকে নিজের স্বামী দাবি করে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ মিথ্যা মামলার মূলহোতা হিসেবে কুলসুম, শফিকুর রহমান ও রুহুল আমীনকে চিহ্নিত করেছে।