শুভেচ্ছা বার্তা
সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল সদস্যকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ দিনে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সকল শহিদ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং সম্মোহনী নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করে।
আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২১-এ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এ দিনে সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১-এ নভেম্বর সশস্ত্র বহিনী দিবস পালন করা হয়।
জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকশ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিট গঠন করেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন। দুর্ভাগ্য, জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাঁধাগ্রস্ত হয় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। আমরা নতুন প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরি। যার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব গাঁথা তুলে আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করাই। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করেছে। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এরোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। সমগ্র জাতি আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটি অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক শক্তি জাতির কাঁধে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে।দেশের মানুষের জীবনের ও জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই; মানুষ স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে নির্বিচারে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ নিত্যদিনের প্রতিচ্ছবি। এগুলো প্রতিরোধে সরকার কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন না করে বরং নিরব দর্শক হয়ে আছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি বিধানে,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জনগণের শেষ আশ্রয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সদা সচেষ্ট থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আশা করে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশপ্রেম, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি, দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে কাজ করে যাবে।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।