বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ) শিক্ষার্থীদের থেকে টিউশন ফি ছাড়াও নতুন ২৩ ধরনের ফি আদায়ের একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি অনুসারে এসব ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার (৩ নভেম্বর) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীর সই করা পরিপত্রের মাধ্যমে এই নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।
এ নীতিমালার অধীনে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে:
মাধ্যমিক (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
মাধ্যমিক (নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
কলেজ (এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)
কলেজ (নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান)।
নতুন এই নীতিমালার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রতিটি মহানগর ও জেলা সদরে ফি নির্ধারণের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করতে হবে। মহানগর কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক), এবং সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন আঞ্চলিক উপপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এ কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা সদরের ক্ষেত্রে সভাপতি থাকবেন জেলা প্রশাসক, এবং সদস্যসচিব থাকবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের মনোনীত অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতিবছর অক্টোবর মাসের মধ্যে এই প্রতিনিধি মনোনয়ন করবেন এবং কমিটির সভাপতিকে অবহিত করবেন।
নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য ২৩ প্রকারের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা
মুদ্রণ
টিফিন
ম্যাগাজিন
ক্রীড়া কার্যক্রম
সাংস্কৃতিক উৎসব
জাতীয় দিবস উদযাপন
ক্লাব গঠন
লাইব্রেরি
কল্যাণ/দারিদ্র্য তহবিল
আইসিটি
বাগান ও বাগান পরিচর্যা
ল্যাবরেটরি
স্কাউট কার্যক্রম
কমনরুম ব্যবহারের ফি
পরিচয়পত্র
নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা
চিকিৎসা সেবা
বিবিধ ব্যয়
উন্নয়ন কার্যক্রম
বিদ্যুৎ
শিক্ষা সফর ফি।
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই খাতগুলোর জন্য সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত ফি ধার্য করতে পারবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাসিক টিউশন ফি এবং তফসিলে বর্ণিত ফি নির্দিষ্ট তফসিলি ব্যাংকে রাখা বাধ্যতামূলক। কোনো নির্দিষ্ট খাতের বার্ষিক আদায় ১০ লাখ টাকার বেশি হলে সে খাতের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। এছাড়া আদায়কৃত অর্থ খাতভিত্তিক ব্যয় করতে হবে এবং এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। সকল আয় ও ব্যয় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
এই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য আলাদা কমিটি গঠন এবং খাতভিত্তিক ব্যয় নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।