বাংলাদেশে ডিজিটাল বাণিজ্যের জন্য প্রথমবারের মতো আন্তসীমান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি সহজ করার পাশাপাশি লেনদেনের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নীতিমালাটির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে, যাতে জনমত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
নীতিমালার উদ্দেশ্য ও সুযোগ
নতুন এই নীতিমালা কার্যকর হলে বাংলাদেশে বসেই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) ছাড়াই ডিজিটাল বাণিজ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমদানি ও রপ্তানি করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন, আমাজন, আলিবাবা, বেস্টবাইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে অনলাইন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করতে পারবে।
ডিজিটাল বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ও চ্যালেঞ্জ
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল বাণিজ্য প্রসার লাভ করেছে। তবে, এই ক্ষেত্রের প্রসারের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। বিশেষ করে নকল বা ভেজাল পণ্য, কল্পিত পণ্য ইত্যাদি বিক্রি রোধে কড়াকড়ি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জুয়া, বেটিং, অনলাইন লটারি বা গেমিংয়ের মতো অনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি ও অন্যান্য শর্ত
এই নীতিমালায় বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, আমদানিকৃত পণ্য রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে ব্যবহার করলে ইপিজেডের সুবিধা প্রযোজ্য হবে, তবে নির্ধারিত কর ও ভ্যাট পরিশোধ বাধ্যতামূলক।
বিটুসি ও সিটুসি সীমান্ত বাণিজ্যের গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী বিজনেস-টু-কনজ্যুমার (বিটুসি) ও কনজ্যুমার-টু-কনজ্যুমার (সিটুসি) সীমান্ত বাণিজ্য বাড়ছে। বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম হতে ডিজিটাল বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের আমদানি ৭৮.২৯ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি ৬৩.০৬ বিলিয়ন ডলার হওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।
লজিস্টিক উন্নয়নে উদ্যোগ
ডিজিটাল বাণিজ্যের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি) চালু করা হবে, যা আন্তর্জাতিক পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। দেশীয় লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সমন্বয় সাধন করা হবে।
ডিজিটাল বাণিজ্যের এই নীতিমালা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। দেশীয় উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য-সেবা সরবরাহে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারবে, যা ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রসারে সহায়ক হবে।