জনতা ব্যাংকের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি নিলামে, আদায় হবে না সব ঋণ

বকেয়া ঋণের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এস আলম গ্রুপের জমি নিলামে তুলেছে। এস আলম গ্রুপের গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের ১৮৬০ শতাংশ জমি নিলামে তোলার মাধ্যমে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে জনতা ব্যাংক। ইতিমধ্যে ব্যাংকটি গত ১ নভেম্বর এক পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে আগামী ২০ নভেম্বর নিলামের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ সম্পত্তির মূল্য পাওনা টাকার তুলনায় অনেক কম, যার ফলে সম্পূর্ণ ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জনতা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের কাছ থেকে বকেয়া ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা জমির বাজারমূল্য প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকা, যা মোট পাওনা টাকার চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ কম। সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে এক্ষেত্রে বাকি টাকা আদায় হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এ বকেয়া ঋণের পুরোটা আদায়ে ব্যাংককে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী, ব্যাংক মামলা করার আগেই জামানত সম্পত্তি নিলামে তুলে ঋণ আদায় করতে পারে।

গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড মূলত ২০১২ সালে জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম করপোরেট শাখা থেকে ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যা ২০২১ সালে সুদে-আসলে এক হাজার ৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় পরিণত হয়। এ ঋণের মধ্যে ৬১৭.৪৭ কোটি টাকা পিএডি (পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট), ২২৩.১৮ কোটি টাকা এলটিআর (ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ঋণ এবং ২২৯.৯৯ কোটি টাকা সিসি হাইপো ঋণ ছিল। তবে চলমান সুদের সাথে এই ঋণের পরিমাণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) ২০২১ সালের একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নির্দেশিকা উপেক্ষা করে ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের অনুমোদিত ঋণসীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার ফলে এ ঋণ পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।

জনতা ব্যাংক ১ নভেম্বর একটি পত্রিকায় গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের সম্পত্তি নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিলামের জন্য আগামী ২০ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে অবস্থিত এস আলম গ্রুপের ১৮৬০ শতাংশ জমি বিক্রি করেও পাওনা টাকার পুরোটা আদায় সম্ভব হবে না। এজন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী সময়ে বাকি ঋণ আদায়ের জন্য আরও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হতে পারে।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ হিসেব অনুযায়ী, নিলামের জন্য নির্ধারিত সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকা, যা মূল পাওনা টাকার তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মনে করছে, সম্পত্তি বিক্রি করেও পুরো ঋণ আদায় সম্ভব নয়। অতএব, বাকি ঋণ আদায়ের জন্য তারা আইনি প্রক্রিয়ার পথে যেতে পারে।

এত বিপুল ঋণের বোঝা এবং নীতিমালা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার পর গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের আর্থিক সঙ্কট এখন তীব্রতর হয়েছে। ঋণ আদায়ের কার্যক্রমের মধ্যে নিলামের মাধ্যমে কিছুটা অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও, পুরো ঋণ আদায়ের আশা ক্ষীণ।

জনতা ব্যাংকের নিলাম প্রক্রিয়া এবং আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা একদিকে সরকারের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তবে অন্যদিকে এ ঘটনাটি ব্যাংক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার অভাবেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

সম্পর্কিত নিউজ

আরও পড়ুন