ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষাজীবন হঠাৎ করে সংকটের মুখে পড়েছে। প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী, যারা এই কলেজে অধ্যয়নরত, তাদের জন্য অনিশ্চয়তা এবং হতাশা দিন দিন বাড়ছে। কারণ, অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
কী ঘটেছিল?
ঢাকা সিটি কলেজে এই সংকটের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে নেতৃত্ব সংক্রান্ত কিছু সমস্যা এবং ছাত্র আন্দোলন। ৭ আগস্ট থেকে কলেজে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নিজেই অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। আগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদার উদ্দিনকে বাধ্যতামূলকভাবে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ পাওয়ার পর, নেয়ামুল হক তার ইচ্ছামতো মোখলেছুর রহমানকে উপাধ্যক্ষ পদে বসান।
এই অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং গত ২৮ অক্টোবর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল অবৈধভাবে দায়িত্ব নেওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষকে অপসারণ এবং বৈধ অধ্যক্ষের নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
কলেজ বন্ধের নোটিশ ও রিট মামলা
এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ নভেম্বর ঢাকা সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেয়ামুল হক এখনও দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে, অধ্যক্ষ বেদার উদ্দিন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। তার দাবির ভিত্তিতে, হাইকোর্ট মো. নেয়ামুল হক এবং মোখলেছুর রহমানের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ
এই সংকটের ফলে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা মারাত্মক হতাশায় ভুগছেন। তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে তারা গভীর চিন্তিত। অভিভাবকদের মতে, সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে বিবেচনায় না এনে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। ফলে, এই সংকটের দায়ভার তাদের সন্তানদের ওপর পড়ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
গভর্নিং বডির পরবর্তী পদক্ষেপ
সিটি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি কলেজে একজন স্থায়ী অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া। কিন্তু এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।” তিনি জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে গেলে আইনগত জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনলাইন ক্লাস চালু করার বিষয়টিও গভর্নিং বডির আলোচনায় রয়েছে।
অধ্যক্ষ পদ নিয়ে রিট মামলা বিচারাধীন থাকায় নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “এখন আমাদের আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগোতে হবে।” অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও ভবিষ্যৎ সংকট
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অপসারণের পাশাপাশি বৈধ অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ না হবে, ততক্ষণ তারা ক্লাসে ফিরে যাবেন না। তারা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অচল অবস্থায় চলে যাওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।
এ অবস্থায়, সরকারি বা কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।