শীর্ষ ১০ কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দেবে ১০ হাজার কোটি টাকা, শীর্ষে গ্রামীণফোন

চলতি বছর দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। এ বছরের মধ্যে গ্রামীণফোন শেয়ারধারীদের মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছর এবং চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মুনাফার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ফলে, নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন শীর্ষস্থানে রয়েছে।

গ্রামীণফোনের ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, আর ৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সেই হিসেবে, এ বছর বিতরণ করা লভ্যাংশের মধ্যে ৩ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা পেয়েছেন কোম্পানিটির বিদেশি মালিকেরা, আর বাকি ৩৮৫ কোটি টাকা পেয়েছেন দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

নগদ লভ্যাংশ বিতরণে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর চূড়ান্ত এবং অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বিতরণ করবে। এর মধ্যে ৯৮৫ কোটি টাকা যাবে বিদেশি মালিকদের কাছে, যাদের হাতে কোম্পানির প্রায় ৭৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ২৭ শতাংশ শেয়ারের মালিকরা পাবেন ৩৬৫ কোটি টাকা। এই লভ্যাংশের একটি অংশ ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, আর বাকি অংশ চলতি বছরের মধ্যে বিতরণ হবে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে দেশের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য রেকর্ড ১১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার পরিমাণ ৯৭৫ কোটি টাকা। এই লভ্যাংশের সিংহভাগ পাবেন দেশি-বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারগুলোর প্রায় ৬৫ শতাংশ এসব বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। বাকি ৩৪৬ কোটি টাকা পাবেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। আগামী ডিসেম্বরে বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে শেয়ারধারীরা লভ্যাংশের অর্থ পাবেন।

এ বছরের শেয়ারবাজারে নগদ লভ্যাংশ বিতরণকারী শীর্ষ ১০ কোম্পানি মিলে ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা বিতরণ করবে। তাদের মধ্যে সাতটি কোম্পানিই বহুজাতিক (বিদেশি মালিকানাধীন), বাকি তিনটি দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানি।

লিনডে বাংলাদেশ

এ তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে লিনডে বাংলাদেশ, একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এ বছর, কোম্পানিটি ৫ হাজার ৬৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে শেয়ারধারীরা ৫৬৪ টাকা করে পাবেন। মোট ৮৫৮ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে, যার মধ্যে প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা পাবেন বিদেশি মালিকেরা এবং বাকি ৩৪৩ কোটি টাকা পাবেন প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এটি তাদের ব্যবসার একটি অংশ বিক্রির পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিমাণ অর্থ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। কোম্পানিটি ৮০১ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৭২ কোটি টাকা বিদেশি মালিকদের এবং ৩২৯ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে যাবে। কোম্পানিটির শেয়ারের ৫৮ শতাংশ বিদেশি মালিকদের হাতে রয়েছে।

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ

ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। তারা ৩০০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এবং ২০০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। মোট ৭২৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে, যার মধ্যে ৪৪৯ কোটি টাকা পাবেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা এবং বাকি ২৭৬ কোটি টাকা পাবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

রবি আজিয়াটা

রবি আজিয়াটা, দেশের শীর্ষ মোবাইল কোম্পানি, সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। কোম্পানিটি ৫২৪ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৭২ কোটি টাকা বিদেশি মালিকেরা পেয়েছেন। বাকি ৫২ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাগে পড়েছে।

ম্যারিকো বাংলাদেশ

এ তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। কোম্পানিটি ৫২০ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করছে, যার মধ্যে ৪৬৮ কোটি টাকা বিদেশি মালিকদের এবং বাকি ৫২ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে যাবে।

ইউনাইটেড পাওয়ার

নবম স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার, বিদ্যুৎ খাতের দেশীয় কোম্পানি। তারা ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার পরিমাণ ৩৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১৩ কোটি টাকা পাবেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা এবং ৩৫ কোটি টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ

দশম স্থানে রয়েছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ। কোম্পানিটি ৫০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার পরিমাণ ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২০ কোটি টাকা বিদেশি মালিকেরা এবং ১২ কোটি টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন।

এই তালিকার শীর্ষ ১০ কোম্পানি একযোগে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করবে, যার মধ্যে বিদেশি মালিকরা পাবেন সবচেয়ে বেশি অংশ। সাধারণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, যাদের হাতে কোম্পানির শেয়ারের কিছু অংশ রয়েছে, তাদেরও বড় অঙ্কের লভ্যাংশ পেয়েছেন।

সম্পর্কিত নিউজ

আরও পড়ুন