যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের জন্য কতটা সুখকর হবে?

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন শাসনভার গ্রহণ করতে যাওয়া ট্রাম্প নতুন প্রশাসন সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের কী প্রভাব পড়বে, সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বনেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, এবং ট্রাম্পের শাসনকালে কিভাবে সম্পর্কের নতুন মাত্রা আসবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাব্য প্রভাব

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকাল ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ছিল নানা কারণে আলোচিত এবং বিতর্কিত। ২০২৪ সালের শপথের পর তার শাসনকাল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাংলাদেশের রাজনীতিতেও কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ট্রাম্পের বিশ্বরাজনীতির প্রতি আগের অবস্থান এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের প্রতি তার মনোভাবের প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্পের বিরোধিতা ও ড. ইউনূসের সম্পর্ক

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রকাশ্যে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ট্রাম্পের জয় আমাদের এতটাই আঘাত করেছে যে, আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম।” ড. ইউনূস, যিনি হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে ক্লিনটনের প্রচারণায় অর্থ সাহায্য করেছিলেন। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গ্রামীণ আমেরিকা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দান করেছিল, যা পরে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

অপরদিকে, ট্রাম্পের বিজয়ের পর তিনি ব্যক্তিগতভাবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এবং উল্লেখ করেছিলেন, “ঢাকার ক্ষুদ্রঋণের লোকটি কোথায়? শুনেছি আমার হারের জন্য টাকা ঢেলেছেন তিনি।” এ মন্তব্যের পর বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা বিস্মিত হয়েছিলেন। এই প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে, ট্রাম্প ড. ইউনূসের প্রতি কোনও বিশেষ স্নেহ অনুভব করেন না, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে সম্পর্কের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ট্রাম্পের মন্তব্য

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে তিনি বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতির পরিচয় দিয়েছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি আক্রমণের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতা ও লুটপাটের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, “আমার সময়ে এটি ঘটত না, তবে আমরা আবার শক্তিশালী আমেরিকা গড়ব এবং শান্তি ফিরিয়ে আনব।”

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে এবং এটির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সহিংসতা আরও তীব্র হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শাসনকালে এই ধরনের সহিংসতার বিরোধিতা এবং তা বন্ধের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। একাধিক সূত্রের দাবি, ট্রাম্পের প্রশাসন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চর্চার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বাধা দেবে।

ট্রাম্প-বিরোধী বক্তব্য ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

ড. ইউনূস, তার ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থান এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরার কারণে ট্রাম্পের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসন সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করলে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তা সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি, ট্রাম্পের এই মন্তব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে। তার প্রশাসন হয়তো এটিকে একটি বড় আন্তর্জাতিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরবে, যা ড. ইউনূস ও বর্তমান সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

মার্কিন আর্থিক সহায়তা ও ইউনূসের ভূমিকা

বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য একটি আর্থিক অনুদান চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং নির্বাচনের আগে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি রেখেছিল। তবে এখন সেই আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশ পাবে কিনা, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের প্রশাসন এই অনুদান প্রক্রিয়ায় যে কোনও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়া, ট্রাম্পের বাংলাদেশে আগ্রহ এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার ভূমিকা প্রমাণ করতে পারে যে, তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি আরও সরাসরি মনোযোগ দেবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশা প্রকাশ করেছেন, যা আরও সম্পর্কীয় সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

সামগ্রিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতি যে মনোভাব থাকবে, তা বাংলাদেশের সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষভাবে, ড. ইউনূসের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্কের অস্থিরতা এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতার বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহায়তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সম্পর্কের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সম্পর্কিত নিউজ

আরও পড়ুন