আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যা মার্কিন রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অভূতপূর্ব গুরুত্ব বহন করছে। আমেরিকার জনগণ আজ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন পরবর্তী চার বছরের জন্য দেশটির নেতৃত্ব দেবেন কে। এই নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, কেননা ওভাল অফিসের নতুন প্রভাবশালী নেতা বৈশ্বিক রাজনীতির উপর বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করবেন।
এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে চরম প্রতিযোগিতা চলছে, এবং বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটারদের মন জয় করতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় নিজেদের সর্বোচ্চ উজাড় করে দিচ্ছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, দেশটির ফেডারেল সিস্টেম অনুযায়ী এই ধরনের অঙ্গরাজ্যগুলোতে সামান্য পার্থক্যেও নির্বাচনের ফলাফলে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে।
হ্যারিসের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বিশেষ করে আরব আমেরিকানদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সম্প্রতি, তিনি মিশিগানে এক প্রচারণা সভায় অংশ নিয়ে গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হ্যারিস তার বক্তব্যে বলেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজা এবং লেবাননে যে ধ্বংস ও মানবিক সংকট চলছে, তা গোটা বিশ্বের জন্য একটি বেদনাদায়ক সময়। এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য তার প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
তবে, যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও হ্যারিস ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে এবং মার্কিন প্রশাসন সব ধরনের আক্রমণের বিপরীতে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করতে কাজ করবে। তার এই বক্তব্য কিছু ভোটারের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে, আবার কেউ কেউ হ্যারিসের প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের তীব্র আক্রমণাত্মক প্রচারণা
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনে তার প্রচারণায় ব্যাপকভাবে বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, বাইডেনের নেতৃত্বে গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে। তার মতে, বাইডেন প্রশাসনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের লজ্জিত হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে বাইডেন প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন যে, রিপাবলিকান পার্টি ক্ষমতায় এলে আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য সোনালি সময় হিসেবে বিবেচিত হবে। তার মতে, রিপাবলিকানদের শাসনে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে ভোটারদের মন জয়
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দোদুল্যমান বা “সুইং স্টেট” হিসেবে পরিচিত কিছু অঙ্গরাজ্যের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোটারদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে নির্বাচনের ফলাফল নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে। এবারের নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং নর্থ ক্যারোলাইনা—এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য যেখানে ভোটারদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বিজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্প ও হ্যারিস উভয়েই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। পেনসিলভেনিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, বাইডেনের অধীনে দেশ আর উন্নতির পথে নেই, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পেয়েছে।
নির্বাচনের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
এই নির্বাচনের ফলাফল শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বৈশ্বিক রাজনীতির উপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি, বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কৌশলগত নীতির পরিবর্তন আনতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক মঞ্চে দেশের ভূমিকা নিয়েও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্বাচন বিশ্ব রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশলগত অবস্থান এবং নেতৃত্বের পরিবর্তনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক নতুন ধারার সূচনা হতে পারে।
নির্বাচনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববাসীও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আজকের নির্বাচনে কাকে জনগণ বেছে নেবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।