নাব্যতার অভাবে পায়রা সমুদ্রবন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে বড় জাহাজ ভিড়তে না পারায় ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ছয় মাসের মধ্যেই চ্যানেলে পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
নাব্যতা সংকটে খরচ বৃদ্ধি
পায়রা বন্দরের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবাহী মাদার ভেসেল আসলেও সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারছে না। বড় জাহাজের মালামাল লাইটার জাহাজে স্থানান্তর করতে প্রতি টন কয়লায় ১০ থেকে ১২ ডলার বাড়তি খরচ হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বড় সংকট
রাবনাবাদ চ্যানেলের মাধ্যমে কয়লা আমদানি করা হয় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরএনপিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে। কিন্তু নাব্যতা সংকটে কয়লা সরবরাহে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। শীতকালে চ্যানেলের গভীরতা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় খরচ আরও বাড়তে পারে।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও নাব্যতা সংকট
রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০.৫ মিটার করার জন্য সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা খরচে বেলজিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘জান ডি নুল’ ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চ্যানেলটি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং না থাকায় চ্যানেলের নাব্যতা দ্রুত হ্রাস পায়।
ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ
পায়রা বন্দরের ব্যবহারকারীরা রাবনাবাদ চ্যানেলের দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নাব্যতা বজায় না থাকলে বন্দরটি ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক হয়ে পড়বে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পলি প্রবণতার কারণে চ্যানেলের নাব্যতা ধরে রাখা কঠিন। দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং চালানোর পাশাপাশি নিজেদের ড্রেজিং সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পায়রা বন্দরের অগ্রগতি
২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু করা পায়রা বন্দর দিনে দিনে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখানে এক হাজার ৪০টি জাহাজ এসেছে। কিন্তু নাব্যতা সংকটের সমাধান না হলে বন্দরটির কার্যকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব হ্রাস পেতে পারে।
রাবনাবাদ চ্যানেলের নাব্যতা সংকট পায়রা বন্দরের কার্যক্রমে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।