বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে অনিয়ম, ভুয়া মামলা দায়ের, এবং অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ। প্রকৃত বাদী কখনো কখনো নিজেই জানেন না, কে তাঁর নামে মামলা করেছেন। এমনকি জীবিত ব্যক্তিকেও মৃত দেখিয়ে মামলা দায়েরের নজির রয়েছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়ায়, যেখানে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করা হলেও পরবর্তীতে দেখা যায় স্বামী জীবিত রয়েছেন।
স্বামী জীবিত অথচ হত্যা মামলা!
ঢাকার আশুলিয়ায় এক নারী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে স্বামী হত্যার মামলা করেন। মামলা দায়েরের তিন মাস পর সেই নারী স্বামী থানায় হাজির হয়ে জানান, তিনি জীবিত আছেন। এই ঘটনা সামনে আসার পর মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গুলির ঘটনায় মামলার নামে অর্থের বাণিজ্য
গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গুলিবিদ্ধ হন মো. জহুর আলী। এক মাস পর তার ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলায় আসামি ধরা ও ছাড়ার ক্ষেত্রে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। জহুর আলী নিজে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আমাকে গুলি করেছে, অথচ মামলায় অন্যদের ফাঁসিয়ে অর্থ বাণিজ্য চলছে। একজন ব্যক্তি কোটি টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে কানাডায় পালানোর পরিকল্পনা করছে। গরিব মানুষ হিসেবে আমি চরম বিপদে পড়েছি।’’
অচেনা বাদী, হত্যা মামলা, ও দখলের অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৪ বছরের ছাত্র আব্দুল মোতালিব নিহত হলে তার বাবা মামলা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে মাছুম বিল্লাহ নামের একজন ব্যক্তি একই ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, এই মামলার আসামিদের সঙ্গে তাদের কোনো পরিচয় নেই। বরং, একটি প্রতিষ্ঠান দখল করতেই এই মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
অস্বাভাবিক আসামির সংখ্যা
যাত্রাবাড়ি থানার সামনে পিকআপ চালক শাহীন হত্যার মামলায় তার স্ত্রী স্বপ্না বেগম মাত্র ৪ জনকে আসামি করেন। কিন্তু মামলার তালিকায় দেখা যায় ৮৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ২ হাজার ৮৭ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। স্বপ্না বেগম জানান, পুলিশ তার সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এতগুলো নাম যোগ করেছে।
আইনজীবী ও পুলিশের বক্তব্য
সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলার মাধ্যমে বাণিজ্য করা হচ্ছে। কোর্ট চত্ত্বর থেকেও আইনজীবীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছে। সরকার অবিলম্বে নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা উচিত।’’
পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘মামলায় কাউকে হয়রানির সুযোগ নেই। ভুয়া মামলা করলে বাদীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
হত্যা মামলা নিয়ে ভুয়া মামলা, বাণিজ্য এবং হয়রানির অভিযোগ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত। একাধিক ঘটনায় প্রকৃত বাদীর না জানিয়ে মামলা দায়ের, অচেনা আসামির নাম সংযোজন, এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর তদন্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়া এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।