বলে দিলেই তো হয় ফাসির দড়ি তৈরীঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বললেন জেনারেল জিয়াউল আহসান!
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে এমন মন্তব্য করেছেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। বুধবার (২০ নভেম্বর) তিনি বলেন, “বলে দিলে হয় আপনাদের ফাঁসি রেডি, দড়ি দিলেই হয়।”
আটজন আসামি হাজিরা দেন ট্রাইব্যুনালে
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে জিয়াউল আহসানসহ আটজন আসামিকে হাজির করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন:
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
ঢাকা জেলার সাবেক এসপি আব্দুল্লাহ আল কাফি
ডিএমপির মিরপুরের সাবেক উপকমিশনার জসিম উদ্দিন মোল্লা
ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুর ইসলাম
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান
গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক
ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক আরাফাত হোসেন
সকাল ১০টার দিকে দুটি প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় প্রার্থনা করেন। তবে ট্রাইব্যুনাল এক মাস সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ১৯ ডিসেম্বর।
আবেগ তাড়িত জিয়াউল আহসান ও তার মন্তব্য
শুনানির শেষ দিকে জিয়াউল আহসান কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তাকে বসাতে গেলে তিনি তাদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে তার আইনজীবী বিচারকের অনুমতি নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেন।
কাঠগড়া থেকে জিয়াউল বলেন, “আমি আয়নাঘরে কখনও চাকরি করিনি। আমার নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমি যেখানে কাজ করেছি, সেটা সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল ছিল।”
জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, “তদন্ত চলছে। আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে যা বলার বলবেন।”
বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করার পর হাজতখানায় নেওয়ার সময় তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেন, “কেউ আমাকে ধরবে না, কাছে আসবে না। তোমরা মার খেয়েছ, ভবিষ্যতে আরও খাবে। আমাকে জেলখানায় কাগজ-কলম দেওয়া হয় না, আমি লিখব। আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে, তা আমাকে লিখিত দাও।”
তাকে বেশ উত্তেজিত দেখা যায়। তবে তার আইনজীবী তাকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন।
প্রসিকিউটরের অভিযোগ ও তুলনা
শুনানির সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ ছাত্র-জনতাকে দেখামাত্র গুলি করেছে। এর দায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের।”
জিয়াউল আহসানের বিষয়ে তাজুল বলেন, “বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ‘কসাই’ রাদোভান কারাদজিচের সঙ্গে তার তুলনা করা যায়। আয়নাঘর ও গোপন বন্দিশালা তৈরিতে তার ভূমিকা ছিল। তার নিষ্ঠুরতা নাৎসি বাহিনীকেও হার মানায়। দেশে যত কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে, তার পেছনে জিয়াউল আহসানের হাত ছিল।”
সংক্ষিপ্ত শুনানি ও পরবর্তী কার্যক্রম
৪৫ মিনিটের এই শুনানির শুরু হয় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এক মাস সময় নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৯ ডিসেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।